27.3 C
Bangladesh
Friday, November 15, 2024
spot_imgspot_img
Homeআন্তর্জাতিকহুজি বিলুপ্তপ্রায়, জঙ্গিদের লক্ষ্য পুলিশ।

হুজি বিলুপ্তপ্রায়, জঙ্গিদের লক্ষ্য পুলিশ।

আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে ১৬ বছর আগে দলীয় সমাবেশে গ্রেনেড হামলা চালিয়েছিল দুর্ধর্ষ জঙ্গিগোষ্ঠী হরকাতুল জিহাদ (হুজি–বি)। বারবার আওয়ামী লীগ ও অসাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর ওপর হামলাকারী এই জঙ্গিগোষ্ঠী এখন বিলুপ্তপ্রায়। তবে নব্য জেএমবি ও আনসার আল ইসলামের মতো জঙ্গিগোষ্ঠীগুলো এখনো হুমকি হয়ে আছে। তাদের এখনকার লক্ষ্য পুলিশ। এর মধ্যে গত এক বছরে নব্য জেএমবি দেশে ছোট ছোট ১০টি বোমা হামলা চালিয়েছে, এর মধ্যে আটটিই ছিল পুলিশের ওপর। এই জঙ্গিরা ছোট ছোট গ্রুপে সংগঠিত হয়ে নতুন করে নাশকতার চেষ্টায় আছে।

দেশে এ পর্যন্ত যতগুলো জঙ্গি সংগঠনের তৎপরতা দেখা গেছে, এর বেশির ভাগই কোনো না কোনো আন্তর্জাতিক গোষ্ঠীর মতাদর্শ নিয়ে কিংবা যোগাযোগের মাধ্যমে গড়ে উঠেছে। তবে হুজি–বির মতো ভারী অস্ত্রের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ও সম্মুখযুদ্ধের অভিজ্ঞতা অন্য জঙ্গিগোষ্ঠীর সদস্যদের নেই। নব্য জেএমবির হোলি আর্টিজান বেকারিতে হামলা বাদ দিলে দেশে সবচেয়ে বেশি ভয়ংকর হামলা ও প্রাণহানির ঘটনা ঘটিয়েছে হুজি–বি। তাঁরা অন্তত চার দফা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার চেষ্টা চালিয়েছে। এর মধ্যে সর্বশেষ ও সবচেয়ে ভয়ংকর হামলা ছিল ২০০৪ সালে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা।

আগামীকাল সেই ২১ আগস্ট। সেদিন বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনার সমাবেশে গ্রেনেড হামলা চালায় জঙ্গিরা। এতে ২৪ জন নিহত হন। আহত হন তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনাসহ কয়েক শ নেতা-কর্মী।

আফগানফেরত মুজাহিদদের গড়া সংগঠন হুজি-বি গত শতকের নব্বইয়ের দশকের শুরুতে এ দেশে জঙ্গিবাদের গোড়াপত্তন করেছিল। এরপর ১৯৯৯ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত ছয় বছরে এই জঙ্গিগোষ্ঠী দেশে ১৩টি বোমা ও গ্রেনেড হামলা চালায়। এতে ১০৬ জন নিহত হন। আহত হন ৭০০–এর বেশি মানুষ।

২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় আসার পর এক বছরের মধ্যে হুজি–বির প্রায় সব শীর্ষস্থানীয় নেতা এবং গুরুত্বপূর্ণ জঙ্গিদের গ্রেপ্তার করে বিচারের মুখোমুখি করা হয়। এরই মধ্যে হুজির অন্যতম শীর্ষ নেতা মুফতি হান্নানের ফাঁসি কার্যকর হয়েছে। দীর্ঘদিন এই জঙ্গিগোষ্ঠীর কোনো তৎপরতা নেই।

হুজির পর্ব শেষ হয়ে গেলেও বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে এখন দুটি গোষ্ঠী হুমকি হয়ে আছে, তারা হলো আইএস ও আল–কায়েদা। এ দেশে তৎ​পর আনসার আল ইসলাম বা আনসারুল্লাহ নিজেদের আল–কায়েদার ভারতীয় উপমহাদেশের (একিউআইএস) বাংলাদেশ শাখা দাবি করে। আর নব্য জেএমবি আইএসের (ইসলামিক স্টেট) মতাদর্শ অনুসরণ করে। এর মধ্যে নব্য জেএমবি দেশে নতুন মাত্রার ঝুঁকি তৈরি করে। ২০১৬ সালের ১ জুলাই গুলশানে হোলি আর্টিজান বেকারিতে হামলার মধ্য দিয়ে সেটার ভয়ংকর রূপ দেখা গেছে।

এ ছাড়া ২০০৫ সালে একযোগে দেশের ৬৩ জেলায় ৫০০ বোমা ফাটিয়ে ব্যাপকভাবে আলোচনায় আসা জামাআতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি) সাংগঠনিকভাবে অনেক দুর্বল অবস্থায় থাকলেও পুনরায় সংগঠিত হওয়ার চেষ্টায় রয়েছে। সংগঠনটি তাদের মতাদর্শ ও সাংগঠনিক তৎপরতা প্রতিবেশী দেশ ভারতেও বিস্তারে সক্ষম হয়েছে। গত কয়েক বছরে ভারতে বেশ কজন জেএমবির নেতা বা সদস্য গ্রেপ্তার হয়েছে। জেএমবির বর্তমান আমির সালাহউদ্দিন ওরফে সালেহীনও ভারতে অবস্থান করছে বলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে তথ্য রয়েছে।

জঙ্গি তৎপরতার বিষয়ে নজরদারিতে যুক্ত ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তার মতে, আফগানিস্তানের সরকারের সঙ্গে তালেবানদের আলোচনা, সম্প্রতি ৪০০ তালেবান বন্দীকে মুক্তি দেওয়া, তার আগে যুক্তরাষ্ট্রও তালেবানদের সঙ্গে শান্তি চুক্তি করা—এসবকে তালেবানদের বিজয় হিসেবে দেখছে এই উপমহাদেশের জঙ্গিরা। এতে এ দেশের জঙ্গিরাও, বিশেষ করে আল–কায়েদা মতাদর্শী জঙ্গিগোষ্ঠীও বেশ উৎসাহিত। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে পাকিস্তানের কারাগার থেকে লস্কর–ই–তাইয়েবার প্রধান হাফিজ সাঈদের মতো জঙ্গিনেতাকে মুক্ত দেওয়ার ঘটনাও। এ ছাড়া সিরিয়ায় আইএসের পতনের পর বাংলাদেশের জঙ্গিরা পাকিস্তানকে এখনো নিরাপদ অঞ্চল ভাবছে। উপমহাদেশে ‘গাজওয়াতুল হিন্দ’ হবে, বা খিলাফত প্রতিষ্ঠা হবে; এই লক্ষ্য সামনে রেখে তৎপর জঙ্গিরা।

সূত্রঃপ্রথম আলো

Most Popular

Recent Comments