জাহিদুল ইসলাম জাহিদ, কুয়াকাটা-কলাপাড়া (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি:-
আজ মধ্যরাত থেকে ২ নভেম্বর পর্যন্ত মোট ২২ দিন, সারা দেশে নদী ও সমুদ্রে মাছ ধরা বন্ধ থাকবে। এ সময় দেশব্যাপী ইলিশ আহরণ, বিপণন, ক্রয়-বিক্রয়, পরিবহণ, মজুদ ও বিনিময় নিষিদ্ধ থাকবে।
মৎস্য অফিস সূত্রে জানা যায়, ১২ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া ২২ দিনের অবরোধ চলবে ২ নভেম্বর ২০২৩ পর্যন্ত। বুধবার ( ১১ অক্টোবর) দিবাগত রাত ১২.০১ মিনিট থেকে শুরু হচ্ছে এর কার্যকারিতা।
এ তথ্য জানার পর থেকেই মহিপুর, কুয়াকাটা জেলে পল্লীতে গভীর সমুদ্রে মাছ ধরা বন্ধ করার পরিকল্পনা নিচ্ছে জেলেরা, আজ ১১ অক্টোবর কুয়াকাটা ক্ষুদ্র জেলে পল্লীগুলোতে দেখা যাচ্ছে, গভীর সমুদ্র থেকে গুছিয়ে নিচ্ছে জাল পালা, কেউবা মাহাজনের সাথে সব হিসাব-নিকাশ সেরে নিচ্ছে,
তবে এবার ৬৫ দিনের মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞা শেষ হতে না হতেই, উপকূলের জেলেদের আবহাওয়া সংকেত ও সমুদ্র সৈকত উত্তল থাকা সহ ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞার মোট আড়াই মাসের ব্যবদানে, নানা সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছে জেলেদের, এতে ঋণের বোঝা বেড়েছে তাদের।
মহিপুর আলিপুর মৎস্য বন্দর গভীর সমুদ্রে থাকা জেলেরা মন কে মন ইলিশ নিয়ে ঘাটে চলে আসছে , শেষ মুহূর্তে জমজমাট হয়ে উঠেছে মৎস্য আরত পট্টি, ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে মাহাজন সহ সকল জেলেরা, কুয়াকাটার পুরো এলাকাজুড়ে জেলেপল্লী গুলো ব্যস্ত হয়ে পরছে, দেখা মিলেছে কেউ নৌকা ঠিক করছে বা অন্য কেউ জাল পালা গুছিয়ে নিচ্ছেন, লক্ষ করে দেখা গিয়েছে একজন লোক এক এক কাজে ব্যস্ত রয়েছেন, সবার মনোবল ও বুকের আশা পুষে রেখেছেন, অতি তাড়াতাড়ি সবকিছু গুছিয়ে আরামে থাকবে ৷
তবে এখন যে মাছ পাওয়া যাচ্ছে সব মাছে দেখা মিলছে না ডিম। জেলেরা মনে করেন মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞা টি ১২ অক্টোবর না দিয়ে। ৩০ অক্টোবরের জন্য সংবাদ সম্মেলন করেছিল, তাতে কোন সাড়া দেয়নি মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। তার পরো এই অবরোধ যুক্তিসম্মত মনে করছে জেলেরা। তারা ধারণা করছেন অবরোধের নিষেধাজ্ঞ তা উঠে গেলে অনেক মাছ ধরা পড়বে বাংলাদেশের জেলেদের জালে, তবে এই কথার ফাঁকে জেলেদের ক্ষোভ রয়েছে ।
কুয়াকাটা জেলেপল্লীর জেলে দেলোয়ার মোল্লা বলেন, আমরা গভীর সমুদ্রের মাছ শিকার করে থাকি, আমরা সব সময় সরকারি নির্দেশ নির্দেশনা মেনে চলি, তারই ধারাবাহিকতায় এই ২২ দিন অবরোধ আমরা মেনে সাগর থেকে আমাদের সংসার তুলে নিয়ে এসেছি, সুন্দরভাবে ২২ দিন পরে আবারো গভীর সমুদ্রে মৎস্য শিকার করার পরিকল্পনা করছি, এবং মাহাজনের সাথে আমরা হিসাব নিকাশ সেরে ফেলেছি ৷
কুয়াকাটার মৎস্য আরধ আল্লাহর দান ফিশ এর ম্যানেজার মোঃ রুবেল বেপারী বলেন, আমরা জেলেদের সাথে সব হিসাব-নিকাশ করেছি, আমাদের কাছে যে টাকা পাওনা ছিল সব জেলেদের বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে।
আব্দুল্লাহ ফিশের মাহাজন, শাহ আলম হাওলাদার বলেন,৬৫দিন অবরোধ এর পরে জেলেদের জালে তেমন মাছ শিকার হয় নাই, যখন কিছু মাছ জেলেদের জালে ধরা পড়ছে তখনই এই ২২দিনের অবরোধ চলে এসেছে তবে এই ২২ দিনের অবরোধ টি যুক্তিসম্মত, কিন্তু ৬৫দিনের অবরোধ দেয়ার কোনো যুক্তি দেখছে না তারা |
মহিপুর মৎস্য বন্দরের জেলে, হারুন আকন একই সময় মনের ক্ষোভ প্রকাশ করলেন, আমাদের অবরোধ দেওয়া হচ্ছে, আমরা সরকারি নির্দেশ মানছি,তবে ফাঁকা মাঠে গোল দিচ্ছে ভারতের জেলেরা, আমরা যখন সরকারি নির্দেশ মেনে নিয়ে ঘাটে চলে আসি তখন ফাঁকা মাঠে ভারতের জেলেরা আমাদের মাছ শিকার করে নিয়ে চলে যায়। তিনি সাথে সাথে সরকারের কাছে এর সমাধান চায়, এই অবরোধে ভারতের জেলেরা বাংলাদেশে ঢুকে মাছ ধরা নিষেধ করার এবং ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানায়।
কুয়াকাটা আশার আলো জেলে সমবায় সমিতি সভাপতি নিজাম শেখ বলেন, কুয়াকাটার জেলেরা সবসময় সরকারি নির্দেশ মানছেন। আলিপুর মৎস আরোদের সভাপতি আনসার উদ্দিন মোল্লা বলেন, ইতিমধ্যেই গভীর সমুদ্রে থাকা ট্রলার ঘাটে চলে এসেছে তাদের নিজেদের হিসাব নিকাশ সবকিছুই করে নিয়েছে সরকারি নির্দেশ মানছে এবং ২২ দিনের অবরোধ কাটিয়ে আবারো সমুদ্রে মাছ শিকার করবে জেলেরা।
কুয়াকাটা পৌরসভার ৩নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও প্যানেল মেয়র মো: মনির শরীফ বলেন, কুয়াকাটা পৌরসভা থেকে জেলেদের সব সময় সহযোগিতা ও ভালো পরামর্শ দিয়ে থাকে, সরকারি তহবিল থাকছে জেলেদের সহযোগিতা থাকবে।
কলাপাড়া উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা অপু সাহ জানান, বিগত কয়েক বছরে ইলিশ প্রজনন মৌসুমে মৎস্য শিকারের নিষেধাজ্ঞার ধারাবাহিকতায় সাগরে বেড়েছে ইলিশসহ নানা প্রজাতির মাছ। অবরোধ সফল করতে জেলেদের নিয়ে উঠান বৈঠকসহ চলছে ধারাবাহিক গনসংযোগ। সমুদ্রসহ স্থলভাগে সক্রিয় রয়েছে প্রশাসন ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থা। প্রতি বছরের ন্যায় এ বছরও সরকার ১২ অক্টোবর থেকে ২ নভেম্বর পর্যন্ত ইলিশের প্রজনন মৌসুমের জন্য ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে।