মোঃ বনি আমিন, ঢাকা কলেজ প্রতিনিধিঃ ২৬ বছর ধরে ছাত্র সংসদ নেই ঢাকা কলেজে এক সময়কার ছাত্র রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দু, জাতীয় রাজনীতিতে অনেক ছাত্রনেতা উপহার দেয়ার একটি ব্র্যান্ড ছিল ‘ঢাকা কলেজ ছাত্র সংসদ’। ১৮৪১ সালের ২০ নভেম্বর বাংলাদেশ তথা ভারতীয় উপমহাদেশের প্রথম আধুনিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত ঢাকা কলেজের ছাত্র সংসদের রয়েছে একটি অনন্য ইতিহাস ঐতিহ্য।
বর্তমানে বাংলাদেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের অনেক উজ্জ্বল নেতা কিংবা প্রয়াত অনেক জাতীয় নেতা ঢাকা কলেজ থেকে তাদের সোনালি রাজনৈতিক জীবনের সূচনা করেছিলেন।
সেই ঢাকা কলেজে দীর্ঘ ২৬ বছর ধরে ছাত্র সংসদ নির্বাচন নেই ৷ ঐতিহ্যবাহী এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দীর্ঘদিন ধরে ছাত্র সংসদ না থাকার ফলে শিক্ষাঙ্গনে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে বলে মনে করেন শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, যেখানে ক্যাম্পাসের সাহিত্য, সংস্কৃতি, ক্রীড়া, নাট্যকলাসহ সব সাংস্কৃতিক কার্যক্রম ছাত্র সংসদ করে থাকে, সেখানে দীর্ঘদিন ধরে ছাত্র সংসদ না থাকার ফলে এসব থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন তারা। তারা মনে করেন, সাধারণ শিক্ষার্থীদের পাশে ও তাদের দাবি-দাওয়া নিয়ে কলেজ প্রশাসনের সঙ্গে কাজ করার জন্য ছাত্র সংসদ নির্বাচন হওয়া প্রয়োজন।
ঢাকা কলেজ ছাত্র সংসদ সম্পর্কে সবচেয়ে পুরোনো তথ্য পাওয়া যায় তা হলো, ১৯৩২–৩৩ সালের ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক (জিএস) ছিলেন নুরুল হুদা। ওই সময় জিএস ছিল সর্বোচ্চ পদ। বর্তমানে সহ-সভাপতি বা ভিপি হলো নির্বাচিত সর্বোচ্চ পদ।
এরপর ’৫০-এর দশকে ৮টি, ’৬০-এর দশকে ৭টি, ’৭০-এর দশকে ৩টি, ’৮০-এর দশকে মাত্র ১টি এবং সর্বশেষ ’৯০-এর দশকে ৪টি ছাত্র সংসদ গঠিত হয়।
সর্বশেষ ছাত্র সংসদ নির্বাচন হয় ১৯৯৩–৯৪ সালে। ওই সময় জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল থেকে হারুন-জাবেদ প্যানেল জয়ী হয়।
দীর্ঘদিন ধরে ছাত্র সংসদ নির্বাচন না হওয়া প্রসঙ্গে ঢাকা কলেজ ছাত্র সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী সর্বশেষ (১৯৯৩-৯৪) ভিপি হারুন-আর-রশীদ জাগো নিউজকে বলেন, ‘ঢাকা কলেজ বাংলাদেশের ইতিহাসে একটা ঐতিহ্যবাহী কলেজ। এখানে ছাত্র রাজনীতি শুরু হয়েছে অনেক আগে থেকে। ছাত্রদের অধিকার নিয়ে আন্দোলন করার পর এখানে সর্বপ্রথম ছাত্র সংসদ নির্বাচন হয়। তবে দীর্ঘদিন ছাত্র সংসদ নির্বাচন না হওয়া জাতির জন্য হতাশাজনক ও অশনি সংকেত এবং বাংলাদেশের জাতীয় রাজনীতির প্রেক্ষাপটে জাতীয় নেতা তৈরি হওয়ার পথে একটা বিশাল অন্তরায়। আমি মনে করি, বিগত দিনে যা-ই হয়েছে অদূর ভবিষ্যতে দ্রুত ছাত্র সংসদ চালু করা উচিত।’
ছাত্র সংসদ নির্বাচনের বিষয়ে ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগের যুগ্ম-আহ্বায়ক জামাল উদ্দিন মাহী বলেন, বঙ্গবন্ধুর আদর্শের ধারক বাহক সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ছাত্র সংসদসহ গঠনমূলক কাজে ক্যাম্পাসে সবসময় সংশ্লিষ্ট থাকে। ছাত্র সংসদ আমাদের দাবি। আমরা আশা করি, সরকারি কলেজে জটিলতা থাকলেও সেই জটিলতা কাটিয়ে খুব শিগগিরই ছাত্র সংসদ নির্বাচন দেবে ক্যাম্পাস প্রশাসন।’
তিনি আরও বলেন, এর আগেও আমরা শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে আলাপ করেছিলাম। আমরা চাই, দ্রুত ছাত্র সংসদ নির্বাচন দেয়া হোক৷
ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য শাহীন সাদেক মির্জা বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের কমিটি নেই, অন্যদিকে ছাত্র সংসদ নির্বাচন হয় না। এমন পরিস্থিতিতে ঐতিহ্যবাহী এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নেতৃত্ব তৈরি হওয়ার প্রক্রিয়া স্থবির হয়ে পড়েছে।’
তিনি বলেন, ছাত্র সংসদ হলো একটি ক্যাম্পাসের প্রাণ তথা শিক্ষার্থীদের আশ্রয়স্থল। ক্যাম্পাসের সার্বিক উন্নয়নের জন্য অবিলম্বে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের জোর দাবি জানাচ্ছি।
ঢাকা কলেজ ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান সজীব বলেন, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল সবসময় ঢাকা কলেজ ছাত্র সংসদ নির্বাচন চায়। সকল ছাত্র সংগঠনের সহাবস্থান নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে দ্রুত ছাত্র সংসদ নির্বাচনের দাবি জানাচ্ছি। তিনি বলেন, ছাত্র সংসদ নির্বাচনে আমাদের সর্বাত্মক সহযোগিতা থাকবে।
বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন ঢাকা কলেজ শাখার সভাপতি বি এম জুবায়ের প্রধান বলেন, ‘দীর্ঘসময় ধরে ঢাকা কলেজ ছাত্র সংসদ নির্বাচন হয় না। অবিলম্বে ছাত্র সংসদ নির্বাচন দিতে হবে এবং অবশ্যই মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সকল সংগঠনকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার সুযোগ করে দিতে হবে। এর মাধ্যমে পরিবহন সংকট, আবাসন সংকট, খাবার মানের সংকটসহ সকল সমস্যার সমাধান করতে হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর নেহাল আহমেদ বলেন, পরিবেশ ঠিক হলে আগামীতে ছাত্র সংসদ নির্বাচন দেয়া হবে।