নয়নাভিরাম গাইন (নয়ন) কলাপাড়া প্রতিনিধি।
বয়সের ভারে চলার ক্ষমতা প্রায় হারিয়ে ফেলেছেন। কথাবলার ক্ষমতাও ক্ষিন হয়ে এসেছে। তবু সুখের আশা ছাড়েনি। শেষ বয়সে এসেও একটু ভালোযায়গায় ভালো ঘরে থাকার চিন্তায় ঘুরছেন অফিসের দরজায়। হাতে পলিথিনে মোড়ানো কিছু একটা,আর চলার সহযোগী লাঠিতে ভর করে দীর্ঘক্ষণ বসে থাকতে দেখে কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম খালা কেন এসেছেন এখানে? উত্তরে বল্লো ‘বাবা ‘ইওনো’ সাইবের লগে একটু কতা কমু’। কৌতুহলী হোলাম আবার বল্লাম কেন? উত্তরে জানাল ‘বাবা আমার কিচ্ছু নাই মোর একটা ঘর লাগবে হেই লইগ্গা(সেজন্য) অনেকক্ষণ ধইরা বইয়া রইছি। তারপর হাউমাউ করে কেঁদে কেঁদে জানাল তার দুই মেয়ে ও দুই ছেলে। মেয়েদের বিয়ে দিয়েছেন। ছেলেরাও সংসার করে দুরে থাকেন। এখন পরিবার বলতে শুধু তিনি আর (৮০) ছুই ছুই বৃদ্ধ স্বামী। একমাত্র ভিক্ষাবৃত্তিই তার জীবিকার প্রধান মাধ্যম। সারাদিন কলাপাড়া পৌরশহরের অলিগলি, এ দোকান সে দোকান ঘুরে আকুতি জানিয়ে যা জুটে তা দিয়ে চলে দু’জনার বেঁচে থাকার লড়াই। সম্বল বলতে আছে সরকারি পানি উন্নয়ন বোর্ডের জায়গায় একটু ঝুপড়ি ঘর বেরিবাদের বাহিরে হওয়ায় জোয়ার ভাটার পানিতে ডোবে ভাসে। তাই তিনি একটুরো জমিতে একটা সরকারি ঘরের আসায় ঘুরছেন অফিসে দরজায়। গত বুধবার(৩০ নভেম্বর) দুপুরে কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহীর কর্মকর্তার অফিসের দরজায় তার সাথে দেখা করতে এসে এসব কথা বলেন আনুমানিক ৭০ বছর বয়সী সাফিয়া খাতুন। তিনি কলাপাড়া পৌরশহরের বড় কলবাড়ি সংলগ্ন নাচনাপাড়া এলাকার বাসিন্দা মন্নান মিয়ার স্ত্রী। চার সন্তানের জননীর এই অসহায়ত্বের কথায় ব্যাথিত করে হৃদয়বান সকলের মন। তার এই অসহায়ত্ব প্রমান করে সমাজ অবক্ষয়ের দিকে ধাবিত হয়েছে অনেক খানি। মা বাবার প্রতি মায়া মতমতা বিতারিত হয়েছে অনেক সন্তানদের হৃদয় থেকে।
নাড়ি ছেড়া ধন বড় করতে বাবা মা উৎসর্গ করেছেন জীবনের সব কিছু। শুধু শেষ বয়সে পরনে একটু বস্ত্র, পেঠ পুরে তিন বেলা দুমুঠো অন্য আর মাথাগোঁজার একটু ঠাইয়ের আশায়। কিন্তু সমাজের চিত্র হৃদয় আতকে ওঠার মতো। মা সাফিয়া খাতুন ও বাবা মন্নানের মতো অসংখ্যা বাবা সমাজে ধুকরে ধুকরে কাঁদছে। তাই আসুন সবাই মানসিকতার পরিবর্তন করি। পিতা মাতার শেষ বয়সে পরিবারের সকলের সাথে বাবা মাকে আকড়ে রেখে তাদের প্রতি আমাদের কর্তব্য পালন করে নিজের ভবিষ্যতের ভিত শক্ত করি। নচেৎ এই পরিনতির অপেক্ষাকরছে আপনার জন্যও। মনে রাখবেন আপনিও কারও বাবা মা হচ্ছেন। আপনার সন্তারাও আপনার দায়িত্ব বোধ দেখে শিখে নিবে। শেষ বয়সে হিসেব চুকে যাবে কড়ায় গন্ডায়।
বিঃদ্রঃ কাউকে কটাক্ষ করার জন্য আমার এই লেখানয়, সমাজের বাস্তব প্রেক্ষাপট তুলে ধরলাম।