27.3 C
Bangladesh
Friday, November 15, 2024
spot_imgspot_img
Homeজন দূর্ভোগ৬৫ দিনের অবরোধে উপকূলীয় বেকার হওয়া জেলেদের মানবেতর জীবন যাপন।

৬৫ দিনের অবরোধে উপকূলীয় বেকার হওয়া জেলেদের মানবেতর জীবন যাপন।

আবুল হোসেন রাজু: সামুদ্রিক মৎস্য সম্পদ সংরক্ষন, বাঁধাহীন প্রজননের জন্য ইলিশ শিকার রক্ষার ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত বঙ্গোপসাগরে ৬৫ দিনের জন্য সকল প্রকার মাছ ধরা বন্ধ রাখার নিষেধাজ্ঞা অরোপ করেছে মৎস্য বিভাগ। সরকারী নিষেধাজ্ঞায় মেনে গভীর সমুদ্রে মাছ শিকারে না গেলেও পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার উপকুলীয় এলাকার ১৮৩০৫ জেলেদের ভাগ্যে এখনো জোটেনি প্রনোদনার বিশেষ খাদ্য সহায়তা। এতে পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে এসব গভীর সমুদ্রগামী জেলেরা। মাছ শিকারে গোপনে সমুদ্রগামী হচ্ছে অনেক জেলে। বন্দী হচ্ছে আইনের বেড়াজালে। এ অবস্থায় নিষেধাজ্ঞাকালীন সময়ে বিকল্প কর্মসংস্থান সৃস্টিসহ অপ্রতুল খাদ্য সহায়তার পরিমান বৃদ্ধি প্রকৃত জেলেরা ইউনিয়ন পরিষদ থেকে চাল সুষ্ট বন্টন এবং সময়মত প্রদানের দাবী জেলেসহ শিং ট্রলার মালিকদের।
মৎস্য বিভাগ সুত্রে জানা গেছে, উপজেলার ৪০টি জেলে পাড়ায় দুই হাজার ৮০০টি জেলে পরিবারের ২৮হাজার ৯৪০জন সদ্য রয়েছে। এসময়ে কলাপাড়া উপকূলীয় এলাকার প্রায় ১৮৩০৫ জেলেদের জন্য বিশেষ খাদ্য সহায়তার ৫৬ কেজি করে চাল প্রদানের আশ্বাস দেয় মৎস্য বিভাগ। কিন্তু নিষেধাজ্ঞার অর্ধেকটা সময় পেরিয়ে গেলেও অধিকাংশ জেলেরা এখনো পায়নি এ খাদ্য সহায়তা।
ফলে কর্মহীনতায় পরিবার-পরিজন নিয়ে কাটাচ্ছে মানবেতর জীবন। সরেজমিন ঘুরে বিভিন্ন মৎস্য পল্লী দেখা গেছে, উপজেলা মৎস্য বন্দর আলীপুর ,মহীপুর , লালুয়া, ধুলাসার, বাবলতলাঢোস, খাজুরা, গঙ্গামতি, ধানখালী, আন্দামানিক ও রাবনাবাঁধ মোহনা ওই সব এলাকায় বেশি ভাগ মানুষ জেলে। সাগরে মাছ ধরা বন্ধ থাকায় ইলিশ সামুদ্রিক মৎস্য সম্পদ সংরক্ষন, বাঁধাহীন প্রজননের জন্য অনেক জেলে নৌকা ডাঙ্গায় তুলে রেখেছেন। বিভিন্ন ঘাটে জেলেদেও সাথে কথা বলে জানা যায়, বরাদ্দকার চাল জেলেরা সময়মত পাচ্ছেনা। যখন চাল পাচ্ছেন তখন জেলেদের কোনো উপকার হচ্ছে না। ফলে জেলেরা বাধ্য হয়ে নদীতে নামছেন মাছ শিকারে। এমন দুর্দশার সুযোগ নিয়ে কিছু সুবিধাবাদী ব্যবসায়ী জেলেদের উৎসাহিত করছে সাগরে মাছ শিকার করতে। ফলে পরিবারের খাদ্যের যোগান দিতে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে গোপনে মৎস্য শিকারে সমুদ্র যাচ্ছে অনেক জেলে। এতে আইনের বেড়াজালে বন্দী হচ্ছে অনেক জেলে। ভ্রাম্যমান আদালতে গুনতে হচ্ছে জরিমানা। আবার অনেক সময় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে ঘটছে নানা অপ্রীতিকর ঘটনা। এতে ব্যর্থতায় পর্যবসিত হচ্ছে সরকারের সামুদ্রিক মৎস্য সম্পদ সংরক্ষন ও বাঁধাহীন প্রজননের উদ্যোগ।
স্থানীয় জেলেদের অভিযোগ, ভারতীয় জেলেরা বাংলাদেশের জলসীমায় অবৈধভাবে অনুপ্রবেশ করে জোরপুর্বকভাবে ইলিশ মাছ শিকার করে। তারা বাংলাদেশী পতাকা ব্যবহার করে বঙ্গোপসাগরে ইলিশ মাছ শিকার করে। কিন্তু বাংলাদেশ সরকার ইলিশ রক্ষার জন্য অবরোধ দিলে ও ভারতীয় জেলেরা তা না মেনে ইলিশ শিকারে এখন ব্যস্ত দিন কাটান। তারা পশুর,শিবসা, রায়মঙ্গল, মালঞ্চ,কৃঞ্চা,ভাঙ্গারা, নদী এবং সুন্দর বনের নারিকেল বাড়ীয়,মান্দারবাড়ীয়া, আলোরকোল, পেয়ারওয়েবয়া এলাকায় ভারতীয় জেলেরা মাছ শিকার করছেন।
গঙ্গামতি জেলে মো.আলি হোসেন জানান, মাছ ধরা বন্ধ । খাদ্য সহায়তাও নেই। ফলে আমাদের স্ত্রী-পুত্র নিয়ে অমানবিক জীবনযাপন করতে হ্েচ্ছ। এমনিতো করোনা কারনে অনেক জায়গা কাজকর্ম বন্ধ। নিজেদের কথা না হয় বাদই দিলাম। সন্তানদের মুখের দিকে তাকাতে পারি না। তারা ক্ষুধার জ্বালায় ছটফট করছে। এখন সরকারের পক্ষ থেকে দ্রæত খাদ্যসহায়তা না পেলে আমাদের না খেয়ে মরতে হবে।
আলীপুর-কুয়াকাটা ফিশিং ট্রলার মাঝি সমিতির সভাপতি নুরু মাঝি বলেন, মাছ ধরা ছাড়া অন্য কোন কাজ জানা নেই জেলেদের। তাছাড়া মাত্র দু’এক মাসের জন্য কাজেও এদের কেউ নিতে চায়না। ফলে বাড়ীতে অলস সময় কাটাতে হয়। যাদের সামান্য পুঁজি বা সঞ্চয় থাকে তা দিয়ে পরিবারের ভরন পোষন বহন করতে পারলেও অধিকাংশ জেলে পরিবার দু-এক বেলা কিংবা আধা পেট খেয়ে দিন পার করে।
আলীপুর-কুয়াকাটা মৎস্য ব্যবসায়ী ও ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি আনসার উদ্দিন মোল্লা বলেন, ইলিশ মৌসুমের শুরতে ৬৫ দিনের অবরোধের ফলে সাগরে বাড়ছে মাছের উৎপাদন। যার সুফল ভোগ করছে জেলেসহ ব্যবসায়ীরা। কিন্তু এসময়ে প্রদেয় প্রনোদনা বাড়ানো উচিৎ। অবরোধ শুরু হওয়ার কয়েকদিন পরেই তা প্রদান করা হলে জেলেদের খুব উপকারে আসে। পাশাপাশি সাগরে নিয়মিত টহল আরো বাড়ানো দরকার।
কলাপাড়া উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মনোজ কুমার সাহা জানান, উপজেলায় নিবন্ধিত ইলিশ শিকারী জেলের ১৮৩০৫জন পাচ্ছে অবরোধকালীন সরকারী প্রনোদনা। ইতোমধ্যে এ খাদ্য সহায়তা প্রদান শুরু হবে। দ্রæততম সময়ে সকলের কাছে খাদ্য সহায়তা পৌছে দেয়া হবে।


Most Popular

Recent Comments