ক্যারিয়ার গড়ে তোলার মতো করে স্বপ্নের জীবনসঙ্গীকে নিজের করে নেওয়ার জন্যও তামিমকে বহুবছর এভাবে নিয়ম করে খাটতে হয়েছে। লকডাউনের নিশ্চল অবস্থায় চলুন শোনা যাক তামিম-আয়েশার সেই ভালোবাসার গল্প।তামিমের বয়স তখন মাত্র ১৫। পড়তেন চট্টগ্রামের স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান সানশাইন গ্রামার স্কুল এন্ড কলেজে। স্ত্রী আয়েশা সিদ্দীকার পড়াশোনাও চলছিল ঐ একই প্রতিষ্ঠানে। এরমধ্যে কি করে যেন হঠাৎ একদিন আয়েশার ওপর তাঁর নজর পড়ল।কিন্তু স্বপ্নের রাজকন্যাকেও তো ব্যাপারটা জানাতে হতো।সিনেমার ভাষায় বলতে গেলে, ‘প্রথম দর্শনেই মেয়েটিকে ভালো লেগে গেল তামিমের।তামিম তাই প্রথমে ইশারা-ইঙ্গিতের পথটি বেছে নিলেন। এতে অবশ্য কোনো লাভ না হলে দ্বিতীয় ওভারটা তামিম আয়েশার বান্ধবীকে দিয়ে করান। কিন্তু এবারো কোনোরকম ফিরতি বার্তা এলো না।পরেরবার তাই তামিম নিজেই সাহস করে এগিয়ে গেলেন। আয়েশার সামনে গিয়ে একবাক্যে বলে ফেললেন, ‘আই লাভ ইউ’। কিন্তু আয়েশা তখন এসব প্রেম-ট্রেমের ফাঁদে পড়ার পাত্রী নন। তাই রাগী গলায় মুখের ওপর বলে দিলেন, ‘হোয়াট ইজ লাভ? আই হেট দিস ওয়ার্ড – লাভ।’ এদিকে আয়েশার উত্তর শুনে তামিম পড়ে গেলেন আরেক বিপদে। কিন্তু অধিনায়কদের মতো তাৎক্ষণিক একটি বুদ্ধিও কাজ করে যায় তাঁর মাথায়। সেই বুদ্ধিকে কাজে লাগিয়ে আয়েশাকে এবার তিনি বললেন, ‘আচ্ছা, প্রেম করে কাজ নেই। এসব ভালো না। আমরা বরং বন্ধু হয়েই থাকি।’ আয়েশাও নরম কন্ঠে জবাব দিলেন, ‘হ্যাঁ, এটা ভালো প্রস্তাব।’আসলে এখানে ভুলটা করে বসেন আয়েশা। কারণ বন্ধুত্বের বাহানা ধরেই তামিম তখন তাঁর কাছে আসার সুযোগ পান। আয়েশার মনও তখন আস্তে আস্তে গলতে শুরু করে। একটা সময় তিনিও ড্যাশিং ওপেনারের প্রতি আকর্ষণ অনুভব করতে থাকেন। ব্যস, এভাবেই শুরু হলো তামিম-আয়েশার প্রেমকাহিনী।
কিন্তু মূল ঝামেলার শুরুটা তো এখানেই। তামিম, আয়েশা দুইজনই ছিলেন সম্রান্ত রক্ষণশীল পরিবারের সন্তান। তাই একে অপরের সঙ্গে দেখা করতে চাইলে তাঁদেরকে একইসঙ্গে স্কুলের দারোয়ান, বাড়ির পাহারাদার এবং মা-বাবার চোখকে ফাঁকি দেওয়ার মতো অসাধ্য সাধন করতে হতো। এরমধ্যে কখনো সখনো কিছু মুহূর্তের জন্য দূর থেকে চোখাচোখি হলেই তাঁদের অনুভূতিটা হতো ‘এভারেস্ট’ জয় করার মতো। অবশ্য দেশে তখন মোবাইল ফোনও এসে পড়েছিল।
তবে সেগুলো ছিল একদম প্রথমদিককার মডেল। তাছাড়া ঘরে ফোন থাকলেও তো পরিবারের ভয়ে আর সরাসরি কল করা সম্ভব ছিল না। তাই তাঁরা নতুন বুদ্ধি আঁটলেন – ছোট ছোট এসএমএসের মাধ্যমে চলতে লাগল টুকটাক কথাবার্তা। কিন্তু, এবার তৈরি হলো আরেক বিপত্তি। তামিমের কয়েকটি মেসেজ আয়েশার পরিবারের সদস্যদের হাতে পড়লে, রীতিমতো ক্যালেঙ্কারি বাঁধতে নিয়েছিল।এভাবেই দিন যেতে লাগল, সময় কাটতে থাকল। এদিকে কলেজ শেষে আয়েশা মালেয়শিয়ায় পড়াশোনা করার সুযোগ পেয়ে যান। তামিমও ততদিনে জাতীয় দলের নিয়মিত ক্রিকেটার। আর আগের মতো করে এবারো দেখাসাক্ষাত করার একটি উপায় ঠিকই বের করে নিয়েছিলেন তাঁরা। ঐ সময়টায় খেলার ফাঁকে সময় পেলেই আয়েশাকে দেখার জন্য মালেয়শিয়ার ফ্লাইটে চড়ে বসতেন তামিম। কুয়ালালামপুরে তাঁদের কুমার নামের একজন পরিচিত ট্যাক্সি ড্রাইভার ছিল। তামিম সেখানে গেলেই, আয়েশাকে সঙ্গে করে ঐ ট্যাক্সিতে করে পুরো শহর ঘুরে দেখতে বের হতেন। রেস্ট্রুরেন্ট, সিনেমা – এসব করেই তাঁরা চুটিয়ে প্রেম করতে থাকলেন।
তামিম অবশ্য তাঁর প্রেমের কথা সেই ছোট থাকতেই মাকে জানিয়ে রেখেছিলেন। আর ততদিনে মায়ের মনেও খেয়াল এসেছে, ‘ছেলের তো বিয়ের বয়স হয়ে গেল। মেয়েটাও তো এখন বিয়ের উপযোগী। এবার তাহলে বিয়ের কাজটা সেরেই ফেলতে হয়। শুভ কাজে নাকি দেরি করতে হয় না।’ চাচা আকরাম খান, বড় ভাই নাফিস ইকবালদের কানে কথাটা তুলতেই তাঁরাও বিয়ের আসর সাজানোর কাজে লেগে পড়েন।
অবশেষে দীর্ঘ আটবছরের প্রেমের পর ২২শে জুন, ২০১৩ সালে বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ হন এই প্রেমিক যুগল। আর ২২ জুন ২০২০, তামিম-আয়েশার ৭ম বিবাহ বার্ষিকী।