জাহিদুল ইসলাম জাহিদ, কুয়াকাটা (পটুয়াখালী)
চলতি বছরে জুন মাসে পদ্মা সেতু চালুর ঘোষণা দিয়েছে সরকার,থাকছেনা কোনো ফেরি! পুরো ১৪ ঘন্টার সময় বাঁচিয়ে মাত্র ৫ ঘন্টায় কুয়াকাটায় পৌছাবে পর্যটক এমন সুসংবাদ নিয়ে আসছে স্বপ্নের পদ্মা সেতু। আগামী জুন মাসে পদ্মা সেতু চালু হবে এমন ঘোষণা দিয়েছে সরকার।
ব্যাপক বিরম্বনাময় মাওয়া ফেরিতে কাটানো সময়গুলো ভুলে গিয়ে কখন কখন কাঙ্খিত পদ্মা সেতু পার হবে সেই অপেক্ষায় এখন কুয়াকাটা প্রেমী লাখো লাখো পর্যটক। সাধারণ মানুষের পাশাপাশি পর্যটন ব্যবসায়ীদের ধারণা পদ্মা সেতু চালু হলে দক্ষিণাঞ্চলের আমুল পরিবর্তনের পাশাপাশি প্রচুর পর্যটক বাড়বে এতে কুয়াকাটা পর্যটনের ব্যাপক প্রসার ঘটবে।
১৮ কিলোমিটার সমুদ্র সৈকত কুয়াকাটা। গভীর সমুদ্রকে ঘিরে রেখেছে সবুজ বেষ্টনী, সকালবেলার সূর্য উদয় আলো ছড়ায় পর্যটকদের মাঝে, সন্ধ্যাবেলায় সূর্য অস্ত্র দিয়ে পর্যটকদের জানায় রাত হয়েছে, চাঁদনী রাত আগমন প্রিয় প্রিয়সির মনে। এক একটি সময় আনন্দে আনন্দিত হয় কুয়াকাটায় আশা হাজার হাজার পর্যটক। যোগাযোগ ব্যবস্থার এমন পরিবর্তনে যে পরিমান পর্যটক কুয়াকাটায় আসবে তাদের নিরাপত্তা ও রাত্রি যাপনে কতোটা প্রস্তুত কুয়াকাটা এ নিয়ে কথা হয় বেশ কয়েকজন পর্যটন ব্যবসায়ীদের সাথে।
খাবার হোটেল হাই এন্ড রেস্টুরেন্ট মালিক মোঃ হাই শিকদার বলেন, আমাদের সকলের স্বপ্নের পদ্মা সেতু চালু হলে জমজমাট থাকবে কুয়াকাটা, বৃদ্ধি পাবে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বেচাকেনা ভালো হবে মানসম্মত আরো বাড়ানোর জন্য প্রস্তুত।
অভিযাত হোটেল সিকদার রিসোর্ট এন্ড ভিলাস জেনারেল ম্যানেজার আল আমিন উজ্জল জানান, পদ্মা সেতু চালু হলে অনেক পর্যটক বাড়বে এ বিষয়টি মাথায় রেখে আমরা অন্তত ১ হাজার গেস্ট রাত্রি যাপনে সুযোগ দিতে পারি এমন প্রস্তুতি নিচ্ছি।
প্রবীণ পর্যটন ব্যবসায়ী শাহজালাল মিয়া জানান এখন যে পরিমাণ পর্যটক কুয়াকাটা আগমন ঘটে, পদ্মা সেতু চালু হলে বর্তমান সময়ের চাইতে অন্তত তিনগুণ বেশি পর্যটক কুয়াকাটায় আসবে । তাদের থাকা খাওয়া এবং নিরাপত্তার বিষয়টি আমাদের এখনি প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে হবে।
খাবার খাবার রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির সভাপতি সেলিম মিয়া জানান, আমরা দীর্ঘ দিন এ ব্যবসা করে আসলেও বিভিন্ন কারনে লোকসান দিয়ে এসেছি তবে আমরা আশাবাদী পদ্মা সেতু চালু হলে আমাদের সে ঘাটতিটা পূরণ হবে। ইতোমধ্যে অনেক গুলো ভালো ভালো রেস্তোরাঁ সুনামের সাথে কুয়াকাটায় ব্যবসা শুরু করেছে।
কুয়াকাটা হোটেল মোটেল মালিক সমিতির সভাপতি মোঃ শাহ আলম হাওলাদার বলেন, বঙ্গবন্ধুর কন্যা আমাদের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, এক এক করে দক্ষিণ অঞ্চলের সবগুলো ফেরি ব্রিজে রূপান্তর করেছে। জুনে পদ্মা সেতু চালু হলে পর্যটক অনেক বাড়বে। ইতোমধ্যে নতুন হোটেল নির্মান কাজ শুরু করেছেন। আশা করি আমরা সকল প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে পারবো।
কুয়াকাটা শুভ সংঘ ক্লাবের সভাপতি, জাহিদুল ইসলাম জাহিদ মন্তব্য করেন, পদ্মা সেতু উদ্বোধনের শুরুতেই এখনকার তুলনায় অনেক বেশি পর্যটক হবে। তাই আমরা অনেক স্বেচ্ছাসেবী তৈরি করছি, এবং তাদেরকে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে যাতে তারা পর্যটকদের সেবার পাশাপাশি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে পারে কুয়াকাটা ।
ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অব কুয়াকাটা (টোয়াক) প্রেসিডেন্ট রুমান ইমতিয়াজ তুষার সাংবাদিকদের জানান, যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো হলে সেখানে স্বাভাবিক ভাবে পর্যটক বাড়ে। পদ্মা সেতু যেহেতু আমাদের দেশের মানুষের স্বপ্ন পূরণের মতো একটি বিষয় সেখানে সকল মানুষই অন্তত চাইবে একবার হলেও সেতু পার হয়ে এর নান্দনিকতা দেখবে। আর একারনেই কুয়াকাটায় অনেক পর্যটক বাড়বে। ইনশাআল্লাহ আমরা সকল প্রস্তুতি নিয়ে রাখবো সকল পর্যটকদের সর্বোচ্চ সেবা দিতে।
কুয়াকাটা পৌর মেয়র মো: আনোয়ার হাওলাদার বলেন,এই সেতুটি আমাদের দক্ষিণ অঞ্চলের বিশেষ করে কুয়াকাটা জন্য বড় একটি উপহার দিয়েছে আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন পূরণ করছেন তারই কন্যা। পদ্মা সেতু চালু হওয়ার সাথে সাথে প্রচুর পরিমাণ পর্যটকের আগমন ঘটবে আমাদের কুয়াকাটায়। আমরা চেস্টা করছি পৌরসভাকে পরিকল্পিত ভাবে ঢেলে সাজাতে।
টুরিস্ট পুলিশ কুয়াকাটা জোন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আব্দুল খালেক জানান, চলতি বছরের জুন মাসে যদি পদ্মা সেতু চালু করা হলে অসংখ্য পর্যটক বাড়বে। এসব পর্যটকদের পর্যটকদের নিরাপত্তার জন্য আমাদের বেশ প্রস্তুত রয়েছে ।
১৩ টি ফেরি আর দের দিন সময়ের বোঝা সরিয়ে ফেরিবিহীন ৫ ঘন্টায় কুয়াকাটায় কখন পৌছাবে পর্যটকরা সেই দিনটির জন্য অপেক্ষায় যেমন লাখো পর্যটকরা তেমনি পর্যটন ব্যবসায়ীরা তাদের সকল সেবা নিয়ে অপেক্ষার প্রহর গুনছে কবে খুবে স্বপ্নের পদ্মার দুয়ার।