17.5 C
Bangladesh
Sunday, December 22, 2024
spot_imgspot_img
HomeUncategorizedনওগাঁয় বদলগাছীতে কিশোর গ্যাংয়ের আতংকে জনগণ

নওগাঁয় বদলগাছীতে কিশোর গ্যাংয়ের আতংকে জনগণ

মুজাহিদ হোসেন, নওগাঁ জেলা প্রতিনিধি:

নওগাঁর বদলগাছীতে কিশোর গ্যাংয়ের অত্যাচারে এলাকাবাসী অতিষ্ঠ। কিশোর বয়সে পড়াশুনা আর খেলাধুলা করে সময় কাটানোর কথা। কিন্তু এ বয়সে নিজের আধিপত্য বিস্তার ও শক্তি জানান দিতে স্কুল ফাঁকি দিয়ে দলবল নিয়ে ঘুরে বেড়ানো হচ্ছে। বড়দের বা শিক্ষকদের সম্মান না দিয়ে উল্টো কটু কথা বলতেও দ্বিধা করছে না তারা। এমনকি দেখে নেওয়ারও হুমকি দেওয়া হচ্ছে। সম্প্রতি নওগাঁর বদলগাছী উপজেলায় স্কুল ও কলেজ পড়–য়া ছাত্রদের কিশোর গ্যাংয়ের তৎপরতা বেড়েছে। এ ঘটনার জন্য অভিভাবকদের চরম উদাসিনতাকে দায়ী করা হচ্ছে। ছোট অপরাধ থেকে বড় অপরাধের জন্ম হয়। যদি এখনই নিয়ন্ত্রন করা না হয় তাহলে ভবিষ্যতে ভয়াবহ আকার ধারণ করবে। বাড়বে অপরাধ প্রবনতা।

কিশোর গ্যাংয়ের অধিকাংশ ছাত্রই । এছাড়া কিছু কলেজের ছাত্রও আছে। তারা স্কুল ফাঁকি দিয়ে উপজেলা সদরের হাটখোলা বাজারে টিনশেডের নিচে (পাইলট স্কুলের সামনে), ছোট যমুনা নদীর তীরে মন্দিরের নিচে ও নতুন হাট( বালুচর),ঐতিহাসিক পাহাড়পুর,কাষ্টগাড়ী বিল,হলুদবিহার ( দ্বীপগন্জ) বাজর সহ কয়েকটা স্থানে আড্ডা দেয়। স্কুল টিফিনের সময় ছাত্রীদের বিভিন্ন ভাবে কটুকথা বলে এসব কিশোর গ্যাং। তারা তাদের ক্ষমতা জানান দিতে দলবদ্ধ ভাবে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে ঘুরে বেড়ায়। বেশ কয়েক বার ছোট যমুনা নদীর তীরে মন্দিরের নিচে মারপিটের ঘটনাও ঘটেছে। এমনকি কয়েকজনের কাছ থেকে টাকা-পয়সা কেড়ে নেওয়ার মতো ঘটনাও ঘটেছে। বেপারোয়া হয়ে উঠেছে কিশোর গ্যাং। এতে করে আতঙ্ক বিরাজ করছে। কখন কাকে কি বলে অপমান করবে ভয়ে অনেকে তাদের ধারে পাশেও যায় না।

বদলগাছী উপজেলার বিভিন্ন স্থানে কিশোর গ্যাংয়ের মহরা দেখা যায় কিশোর গ্যাংয়ের কারণে রাস্তায় ছিনতাই বেড়ে গেছে।উপজেলার শুরকালী বাজার টু পাহাড়পুর রোড়ে প্রতিনিয়তই ছিনতাই হয়।এ সব ঘটনার জন্য প্রসাশনকে দ্বায়ী করছে সচেতন মহল।

গত ১১আগষ্ট পাইলট সরকারি মডেল হাইস্কুলের সকল শিক্ষকরা মিলে আট জন কিশোর গ্যাংকে আটক করে স্কুলে নিয়ে যায়। পরে অভিভাবকদের ডেকে নিয়ে মুচলেখা দিয়ে ছেড়ে নিয়ে যায়। সামাজিক অবক্ষয় স্কুল বন্ধ ও অভিভাবকদের উদাসিনতা। উপজেলা সদরের কয়েকটি স্থানে ও দোকানের সামনে স্কুল ছাত্রীদের ইভটিজিং এর মতো ঘটনা ঘটছে। কিশোর গ্যাংয়ের বেশ কিছু সদস্য স্কুল ছাত্র। সচেতনরা মনে করছেন সমাজ ব্যবস্থা ধীরে ধীরে লোপ পাওয়ায় সামাজিক বন্ধন, আচার-আচরণে পরিবর্তন, অভিভাবকদের উদাসিনতায় অবক্ষয়ের অন্যতম কারণ।

বদলগাছী পাইলট সরকারি মডেল হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক সুরেশ সিংহ বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে দীর্ঘ সময় স্কুল বন্ধ থাকায় এমনটা হয়েছে বলে মনে হচ্ছে। এছাড়া অভিভাবকদের কিছুটা উদাসিনতা রয়েছে। বর্তমানে শিক্ষকরাও ছাত্রদের শাষণ করতে ভয় পায়। কয়েকদিন আগেও স্কুলের সকল শিক্ষক মিলে কয়েকজনকে ধরে নিয়ে স্কুলে আসা হয়। পরে স্কুলে পুলিশের উপস্থিতিতে অভিভাবকরা মুচলেকা দিয়ে ছাড়িয়ে নিয়ে যায়। এ স্কুলের কয়েকজন ছাত্ররাও জড়িত। আমরা এ বিষয় নিয়ে বিরক্ত। এ বিষয়টি নিয়ে দ্রুত প্রশাসনের উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন।

বদলগাছী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আতিয়ার রহমান বলেন, এ বিষয়ে অভিভাবকদের সজাগ হতে হবে। সচেতনতার জন্য অভিভাবক সমাবেশ করা হচ্ছে। আমরা তৎপর আছি এবং পুলিশি টহল বাড়ানো হয়েছে।

বদলগাছী উপজেলা নির্বাহী অফিসার আলপনা ইয়াসমিন বলেন, উপজেলায় টিনএজ (উঠতি বয়সি) বেশ কিছু ছেলেদের অসঙ্গতি দেখা দিয়েছে। আগামী আইনশৃঙ্খলা মিটিংয়ে এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে। তাদের সচেতনতার জন্য পুলিশ প্রশাসন এবং অভিভবাকদের সমন্বয়ে বেশ কিছু কমিটি গঠন করে দেওয়া হবে। তারা যেন কোন অপরাধের সঙ্গে যুক্ত হতে না পারে জন্য স্কাউটিং, বির্তক প্রতিযোগীতা, পড়াশুনা এবং খেলাধুলায় ব্যস্ত রাখার বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।

কিশোর গ্যাং গড়ে ওঠার কারণ হিসেবে নওগাঁ সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ মো. শরিফুল ইসলাম খাঁন বলেন, শ্রেনী কক্ষে উপস্থিত না থাকা এবং সন্ধ্যার পর বাসা বা বাড়ির বাহিরে থাকাটাই প্রধান সমস্যা। শ্রেনীকক্ষে উপস্থিত বাড়াতে হবে এবং সন্ধ্যার পর বাসার বাহিরে থাকা যাবে না। শিক্ষক এবং অভিভাবকদের এ বিষয়টা দেখতে হবে। এটা করা গেলে কিশোর গ্যাং নিয়ন্ত্রন করা সম্ভব হবে। এছাড়া এই কিশোরদের অবৈধ ভাবে কেউ অর্থের জোগান এবং বড় ভাই হিসেবে তাদের কেউ উৎসাহ দিচ্ছে কিনা দেখতে হবে। মোট কথা অভিভাবকদের সক্রিয়তা বাড়াতে হবে।

Most Popular

Recent Comments