26.5 C
Bangladesh
Sunday, December 22, 2024
spot_imgspot_img
Homeগুণীজনক্ষণজন্মা মহাপুরুষ হযরত মাওলানা আযীযুর রহমান (কায়েদ সাহেব হুজুর) (রহঃ)

ক্ষণজন্মা মহাপুরুষ হযরত মাওলানা আযীযুর রহমান (কায়েদ সাহেব হুজুর) (রহঃ)

প্রগতি ডেস্কঃ

হযরত মাওলানা মোহাম্মদ আযীযুর রহমান (কায়েদ সাহেব হুজুর রহঃ) জন্ম ১৯১৩- মৃত্যু ২০০৮। এদেশের গুণীজনদের মধ্যে ঝালকাঠির কায়েদসাহেব হুজুর(রহ.) অন্যতম। তিনি ১৯১৩ইং সালে ঝালকাঠি জেলার বাসন্ডা (বর্তমান নেছারাবাদ) গ্রামের সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। ক্ষণজন্মা এইগুণী ব্যক্তিত্ব আমরণ দেশ ও জাতির খেদমত করে গেছেন। তাঁর কর্মজীবন মূলত শিক্ষকতার মহান পেশা দিয়েই শুরু। ১৯৪২ সাল থেকে ১৯৬৭ সাল পর্যন্ত টানা ২৫ বছর তিনি ছারছীনা দারুচ্ছুন্নাত আলীয়া মাদরাসায় শিক্ষকতা ও ভাইস প্রিন্সিপাল হিসেবে কর্মরত ছিলেন। এই গুণী শিক্ষকের ছোঁয়ায় অসংখ্য গুণীজন তৈরি হয়েছে। যাদের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবী বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান ও ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক ড. মু. মুস্তাফিজুর রহমান, অধ্যাপক ড. আ.র.ম আলীহায়দার মুর্শিদী, প্রফেসর এম.এ. মালেক, ছারছীনা দারুচ্ছন্নাত আলীয়া মাদরাসার সাবেক অধ্যক্ষ মাওলানা আব্দুর রব খান, মরহুম মাওলানা মো: আমজাদ হোসাইন, প্রখ্যাত মুফাসসিরে কুরআন মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী, দৈনিক সংগ্রামের সাবেক সম্পাদক মরহুম অধ্যাপক আখতার ফারুক, দৈনিক ইনকিলাবের নির্বাহী সম্পাদক মাওলানা কবি রূহুল আমীন খান ও ইসলামী সমাজকল্যাণ পরিষদ চট্টগ্রামের সাবেক সভাপতি মরহুম মাওলানা শামসুদ্দিন উল্লেখযোগ্য। তিনি শিক্ষকতা থেকে অবসরে যাওয়ার পর দক্ষিণাঞ্চলের আনাচে কানাচে শত শত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেছেন। নারী সমাজের উন্নয়নের জন্য ও তিনি অনেক অবদান রেখেছেন। তাঁর নিজ বাড়িতে প্রতিষ্ঠিত কামিল মাদরাসাকে তিনি বহুমুখী কমপ্লেক্সে পরিণত করেছেন। ৪২টি প্রতিষ্ঠান এ কমপ্লেক্সের অন্তর্ভুক্ত। হুজুর কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত ঝালকাঠি এন.এস.কামিল মাদরাসা এখন বাংলাদেশের সেরা আদর্শ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।হযরত কায়েদ সাহেব হুজুরের জীবনের সবচেয়ে অনবদ্য অবদান হচ্ছে- এদেশের সকল মুসলমানকে একত্রিত করার প্রচেষ্টা। তিনি সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করার অপূর্ব এক সূত্র আবিষ্কার করেছেন। তা হচ্ছে- ‘আল ইত্তিহাদ মায়াল ইখতিলাফ’ তথা ‘মতনৈক্য সহ ঐক্য’। ‘মতনৈক্যসহ ঐক্য’ র আহ্বান সকলের কাছে পৌঁছে দেয়ার জন্য তিনি গঠন করেন ‘জমিয়াতুল মুসলিহীন’।তিনি মনে করতেন, বিভক্ত জাতি দিয়ে যেমনি দেশ গঠন করা যায়না, তেমনি ইসলাম কায়েম করা ও অসম্ভব। তাই নিজেদের মধ্যে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র মত পার্থক্য থাকলেও তা নিয়েই দেশ, জাতি, রাষ্ট্র ও ধর্মের বৃহৎ স্বার্থ ও ইস্যুতে ঐক্যবদ্ধ হওয়া প্রয়োজন। ১৯৯৭ সালে তাঁর উদ্যোগে বাংলাদেশে সর্বপ্রথম সর্বদলীয় ইসলামী সম্মেলনের আয়োজন করা হয় ঝালকাঠিতে। মূলত ঐক্য সম্মেলন ছিল ১৯৫২, ১৯৭০- এর ঐক্যের ডাকের ধারাবাহিকতার চূড়ান্ত রূপ। বর্তমানে দেশব্যাপী নাস্তিক্যবাদ বিরোধী যে আন্দোলন গড়ে উঠেছে সেখানে আমরা হযরত কায়েদ সাহেব হুজুরের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছি। তিনি যদি আজ বেঁচে থাকতেন তাহলে নাস্তিকদের বিরুদ্ধে তিনিও ঝাঁপিয়ে পড়তেন সকলকে নিয়ে। জীবদ্দশায় তিনি প্রায়ই বলতেন, ‘আমাদের সংগ্রাম তিন শ্রেণীর বিরুদ্ধে- -, নাস্তিক ও জালেম।’ মূলত এই তিন শ্রেণীর উৎপাতে গোটা দেশ আজ অতিষ্ঠ। বিশেষ করে, নাস্তিকরা যেভাবে ইসলাম, আল্লাহ – রাসূলের বিরুদ্ধে উঠে- পড়ে লেগেছে তা এক কথায় জঘন্য। হযরত কায়েদ সাহেব হুজুর ইসলামের এই জঘন্য অবমাননাকে মোটেই সইতে পারতেন না। হযরত কায়েদ সাহেব হুজুর (রহ.)- এর কাছে ধর্ম – বর্ণ নির্বিশেষে সকলে কাংক্ষিত মর্যাদা পেতেন। ঝালকাঠি অঞ্চলের হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকেরা তাঁকে দেবতাতুল্য মর্যাদা দিতেন। হুজুর যখন ঢাকায় কমফোর্ট হাসপাতালে অসুস্থাবস্থায় চিকিৎসাধীন ছিলেন তখন ঝালকাঠির সকল মন্দিরে তাঁর জন্য বিশেষ প্রার্থনার আয়োজন করা হয়েছিল। মুসলিমসম্প্রদায়ের একজন মানুষের জন্য হিন্দুদের মন্দিরে প্রার্থনার আয়োজন গোটা দুনিয়ার মধ্যে নজির সৃষ্টি করেছে। হুজুর ভালো জিনিস যে কারো থেকে গ্রহণ করতে দ্বিধা করতেন না। স্রষ্টাকে নিবেদিত রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের‘ তোমার প্রেম যে বইতে পারি এমন সাধ্য নাই…..’ গান সহ অনেক গানই হুজুর নিজে গাইতেন। বাদ্যযন্ত্র ছাড়া ক্যাসেট তৈরি করে শুনতেন ও বিক্রি করার আদেশ দিতেন। নকুল কুমার বিশ্বাসের অনেক সমাজ-সংস্কারমূলক গানই হুজুর পছন্দ করতেন। হুজুর ছিলেন কর্মবীর। লোকজনকে কাজ করার উৎসাহ দিতেন। নিজের পয়সায় মাল কিনে বেকার লোকদের ব্যবসা করতে দিতেন। হুজুরের মুখে সবসময় ধ্বনিত হতো- ‘ওগো মুসলমানের ছেলে কাজ করিলে মান যাবে তোর কোন হাদিসে পেলে’।
হযরত কায়েদ সাহেব হুজুর (রহ.) বরাবরই চরম পন্থার বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ করেছেন। সন্ত্রাসবাদকে তিনি মনে প্রাণে ঘৃণা করতেন। সমাজে বা রাষ্ট্রে সংঘটিত যে কোনো খারাপ কর্মের বিরুদ্ধে তিনি নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনের আয়োজন করতেন। ‘সংঘাত নয় শান্তি’ এটাই ছিল হুজুরের মূলনীতি। তবে বাতিলের কাছে কখনো মাথা নত করার পাত্র হুজুর ছিলেননা। ক্ষণজন্মা এই মহা পুরুষ তাঁর কর্মময় জীবনের ইতি টেনে ২০০৮ সালের ২৮ এপ্রিল ইন্তেকাল করেন। তাঁর ইন্তেকালের খবর শুনে সারা দেশ থেকে লাখ লাখ মানুষ ভিড় জমান ঝালকাঠির নেছারাবাদে। তাঁর নামাজে জানাযায় দশ বর্গকিলোমিটার জুড়ে প্রায় পাঁচ লাখ মানুষের সমাগম ঘটেছিল।হযরত কায়েদ সাহেব হুজুরের স্মৃতি ও আদর্শ রক্ষায় আমাদের অনেক করণীয় আছে। তাঁর আদর্শ শুধু মুখে প্রচার করলেই হবেনা, বাস্তবে পরিণত করার চেষ্টা করতে হবে। মুসলিম উম্মাহর ঐক্যের জন্য তিনি যে সাধনা করে গেছেন তাকে আমাদের মূল্য দিতে হবে। তাঁর লেখা বই- পুস্তক ব্যাপক আকারে মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দিতে হবে। হুজুরের প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠান সমূহ বাঁচিয়ে রাখতে আমাদের এগিয়ে আসতে হবে। হুজুরের জীবন ও কর্ম নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায় গবেষণা করা ও একান্ত প্রয়োজন। ইসলাম পন্থীদের জন্য ঐক্যের প্লাটফর্ম হিসেবে‘ জমিয়াতুল মুসলিহীন’ নামে যে সংগঠন তিনি রেখে গেছেন তার হাল ধরেছেন তাঁরই সুযোগ্য পুত্র অধ্যক্ষ্ মাওলানা খলীলুর রহমান নেছারাবাদী। আমাদের সকলের উচিত মুসলিম উম্মাহর ঐক্য সাধনে উক্ত সংগঠনের কার্যক্রমকে দেশব্যাপী ছড়িয়ে দেওয়া।

Most Popular

Recent Comments