জাহিদুল ইসলাম, বশেমুরবিপ্রবি প্রতিনিধিঃ-দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সশরীরে এবং অনলাইনে অর্ধেকেরও বেশি বিষয়ের পরীক্ষা ইতিমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে তবুও গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সেশনের মিডটার্ম ও ফাইনাল পরীক্ষা নিয়ে এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
গত ১৫ জুন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের সাথে জুম প্লাটফর্মে চতুর্থ বর্ষ ও মাস্টার্সের মিটিংয়ে জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহে কিছু রিভিউ ক্লাস নিয়ে সশরীরে পরীক্ষা শুরু হতে পারে বলে জানানো হয়েছিলো।
এর একদিন পর ১৬ জুন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সাথে উপাচার্যের একান্ত মিটিংয়ে বলা হয়েছিলো ঈদুল আজহার আগেই ৭/৮ দিন রিভিউ ক্লাস নিয়ে পরীক্ষা নেয়া হবে।এতে সকল শিক্ষক উপাচার্যের সাথে সম্মতি জ্ঞাপন করেছিলো।সাথে বলা হয়েছিলো ক্লাস শুরুর সময় প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে করোনা টেস্ট করিয়ে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে দেয়া হবে।বিশেষ করে যারা ঝুকিপূর্ণ এলাকা থেকে আসবে,তাদের ক্ষেত্রে একটু বেশি গুরুত্ব দেওয়া হবে।এ বিষয়ে পরের একাডেমিক কাউন্সিলে পাশ হলেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসার কথা ছিলো।
কিন্তু গোপালগঞ্জে করোনা প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় এবং সরকার থেকে গত ২১ জুন গোপালগঞ্জকে কঠোর লকডাউন ঘোষণা করায় গত ২২ জুন একাডেমিক কাউন্সিলের মিটিংয়ে জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহে এবং ঈদুল আজহার আগে চতুর্থ বর্ষ ও মাস্টার্সের সশরীরে পরীক্ষার নেওয়ার সিদ্ধান্ত বাতিল হয়ে যায়।
সাথে ঈদের আগে প্রত্যেক বিভাগকে অনলাইনে মিডটার্ম পরীক্ষা নিতে নির্দেশনা দেওয়া হয়। তবে অনলাইনে কোন পদ্ধতিতে পরীক্ষা নিবেন তা নিজ নিজ বিভাগকে সিদ্ধান্ত নিতে বলা হয়।কিন্তু কোনো ডিপার্টমেন্ট থেকে এখনও মিডটার্মের পরীক্ষার কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি এবং ঈদুল আজহার আগে হবে কিনা তারও নিশ্চয়তা পাচ্ছে না শিক্ষার্থীরা।ঈদের পরে করোনা সংক্রমণ ১০% এর নিচে নামলেই পুনরায় করোনা টেস্ট করে চতুর্থ বর্ষ ও মাস্টার্সের পরীক্ষা সশরীরে নেওয়া হবে বলে জানানো হয়।
এ সিদ্ধান্তে শিক্ষার্থীরা দীর্ঘ দুইবছরের সেশন জটের আশংকায় আছেন।সশরীরে পরীক্ষা নিতে বিলম্ব হলে,অনলাইনেই পরীক্ষা দিতে ইচ্ছুক বেশিরভাগ শিক্ষার্থী।তাদের দাবি যেভাবে হোক দ্রুততম সময়ে পরীক্ষা দিয়ে আসন্ন সেশনজট থেকে মুক্তি।
বায়োটেকনোলজি এন্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ফাইনাল বর্ষের শিক্ষার্থী ইমরান রনি বলেন,”সশরীরে এক্সাম দেয়া সম্ভব হবে বলে মনে হয়না।এভাবে বসে থাকার চেয়ে কিন্তু অনলাইনে পরীক্ষা নেয়ার পারমিশন ডিপার্টমেন্ট ভিত্তিক দিয়ে দিলেই ভালো হয়।
কিন্তু কেন অনলাইনে এক্সাম নিতে দিচ্ছেন না প্রসাশন?বরং কোন ডিপার্টমেন্ট অনলাইনে এক্সাম নিলেও তা থামিয়ে দেয়া হচ্ছে।কিন্তু কেন? আর কয় বছর বসাই রাখবে?”
মার্কেটিং ডিপার্টমেন্টের ২য় বর্ষের শিক্ষার্থী সুরুজ খান শুভ বলেন, “অনলাইনে ক্লাস হলেও পরিক্ষা না হওয়ার কারণে পড়াশোনায় ধারাবাহিকতা নষ্ট হচ্ছে,ফলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে হতাশা বেড়ে যাওয়ায় আত্মহত্যার প্রবণতা বেড়ে যাচ্ছে।কেউ কেউ অন্য পেশায় জড়িত হচ্ছে। ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে ৫০% অনলাইন ক্লাসে উপস্থিত থাকে না।এ ক্ষেত্রে পরীক্ষা নেওয়াটা খুবই জরুরী।
সবচেয়ে ভালো হয় যদি পরীক্ষা সশরীরে নেওয়া যায়। তবে করোনা প্রকোপের কারণে বিকল্প পদ্ধতি হিসেবে অনলাইনে পরীক্ষা নেওয়া যেতে পারে।এক্ষেত্রে প্রান্তিক অঞ্চলের শিক্ষার্থীদের ডিভাইস এবং ইন্টারনেট ব্যবস্থা নিশ্চিত করে পরীক্ষা নিলে সেশনজটের শংকা কিছুটা কমে।”
লোকপ্রশাসন বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী জুবায়েদ মুস্তফা বলেন,”দীর্ঘ দিন ধরে করোনার জন্য আমরা একই শ্রেণীতে অবস্থান করছি।এতে করে আমাদের জীবন থেকে মূল্যবান সময় হারিয়ে যাচ্ছে। আমাদের ক্যারিয়ার এবং ভবিষ্যৎ মেঘ ঢাকা পড়া আকাশের মতো অন্ধকারে ছেয়ে গেছে।যার কারণে রীতিমতো পারিবারিক ও সামাজিক বিভিন্ন চাপ সামলাতে হয়।এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণ না পেলে মানসিক ভাবে হতাশা গ্রস্থ ও অসুস্থ হয়ে পড়বো।তাই এই কঠিন অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য পরীক্ষা প্রয়োজন।আমরা পরবর্তী শ্রেণীতে পদার্পনের জন্য মুখিয়ে আছি। করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় যদি সশরীরে পরীক্ষা না নেওয়া হয় তাহলে অনলাইনে একটি গ্রহণযোগ্যতা তৈরি করে যেন পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হয়। যেখানে সকল শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণ নিশ্চিতের বিষয়টিও প্রশাসন তদারকি করবেন বলে আশা রাখি।”