মুজাহিদ হোসেন, জেলা প্রতিনিধি নওগাঁ
পবিত্র কোরবানির ঈদে নওগাঁয় পশুর চামড়া অনেকটা পানির দরে বিক্রি হয়েছে। পাড়া-মহল্লার অনেকেই ফড়িয়াদের চামড়া ফ্রিতেও দিয়েছেন।
বিগত কয়েক বছর আগে দেখা যায়, গরু-ছাগলের চামড়ার পাশাপাশি মাথার চামড়ার কদর থাকে অনেক। এবার ছাগলের চামড়ার কদর কম হলেও মাথার চামড়ার কোনো কদর মেলেনি। এ অবস্থায় নওগাঁ শহরের গোস্তহাটির মোড় আড়তে মাথার চামড়া ফেলে রেখে গেছেন অনেক কোরবানি দাতা।
প্রকার ভেদে গরুর চামড়া ১৫০ টাকা থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে। শহরের মুক্তির মোড়, পুরাতন বাসস্ট্যান্ড, গোস্তহাটির মোড়, কাজীর মোড় ঘুরে দেখা গেছে, বিক্রেতারা গরুর চামড়া বিক্রি করতে পারলেও ছাগলের চামড়া ফ্রিতে দিয়েছেন।
শহরের চকএনায়েত মহল্লার বাসিন্দা মনোয়ার হোসেন বলেন, ১৩ হাজার ৫০০ টাকা দিয়ে ছাগল কিনে কোরবানি দিয়েছেন। চামড়া কিনতে আসা ফড়িয়ারা দাম বলেছে ৩০ টাকা। সে কারণে চামড়া ফড়িয়াদের না দিয়ে তিনি বাসার কাজের মহিলাকে দিয়ে দিয়েছেন।
শহরের লাটাপাড়া মহল্লার বাসিন্দা সৌরভ হোসেন বলেন, ৫৩ হাজার টাকা দিয়ে একটি গরু কিনে কোরবানি দিয়েছেন। বাজারে চামড়ার দাম খুবই কম। কোরবানি পশুর চামড়ার টাকা গরিবরা পেয়ে থাকে। চামড়ার দাম না থাকায় তারা বঞ্চিত হচ্ছে। চামড়ার দাম না পেয়ে পাশের এতিমখানায় দিয়ে দেয়া হয়েছে।
শহরের বাঙ্গাবাড়িয়া মহল্লার বাসিন্দা শাহাদত বলেন, দেড় লাখ টাকার একটি ষাঁড় গরু ও ১০ হাজার টাকার একটি ছাগল কোরবানি দিয়েছেন। কোরবানি শেষে গরুর চামড়ার দাম ২০০ টাকা বললেও ছাগলের চামড়ার কোনো দাম বলেনি। গরুর চামড়ার সঙ্গে ছাগলের চামড়া ফ্রিতে দিয়ে দিয়েছেন।
নওগাঁর ঐতিহাসিক পাহাড়পুরের চামড়া ব্যবসায়ী জহুরুল ইসলাম বলেন, আড়তদার চামড়া নিতে চাচ্ছে না। ফলে গরু-ছাগলের চামড়া কিনে খরচ ওঠা দূরের কথা, চায়ের দামও হচ্ছে না। ফুটপাতে এখন এক কাপ চা খেতে ১০ টাকা লাগে। আর একটি চামড়ার লাভ হচ্ছে মাত্র দুই টাকা। গরু-ছাগলের চামড়ার এমন করুণ পরিণতি গত কয়েক বছর ধরেই চলছে।
নওগাঁ জেলা চামড়া ব্যবসায়ী গ্রুপের সভাপতি মমতাজ হোসেন বলেন, চাহিদা না থাকায় গরুর চামড়া কিছুটা দাম দিয়ে এবং ছাগলের চামড়া ফ্রিতে নিয়েছি। গরুর ২০০ টাকা থেকে ৩০০ টাকা দরে চামড়া কিনে স্থানীয় আড়তে নিয়ে বিক্রি করব। তবে পরিবহন খরচ বাদ দিয়ে গরু-ছাগলের চামড়ায় তেমন কোনো লাভ থাকবে না।
কিন্তু সাধারণ মানুষের দাবি গরু ছাগলের চামড়ার দাম না থাকলে চামড়ার তৈরি জিনিসপত্রের এতো দাম কেন?এ বিষয়ে সরকারের নজর দেয়া দরকার।